আজকে কাতারের টাকার মান বা কাতারের টাকার রেট কত সেই সম্পর্কে প্রতিটি কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাংলাদেশী অনেক প্রবাসী ভাইরা কাতারে থাকেন এবং সেখান থেকে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন, তাদের জন্য (Qatari Riyal To Bangladeshi Taka) এই আর্টিকেলটা অনেক উপকার হবে বলে আমি মনে করি। যে সকল প্রবাসীরা কাতারে থাকেন তাদের কাতারে ১ রিয়াল = কত টাকা সেই সম্পর্কে জানা বাধ্যতামূলক, এর কোন বিকল্প হতে পারে। তাহলে, চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকে কাতারে ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা।
Table of Contents
কাতারের মুদ্রার নাম কি?
কাতারের মুদ্রার নাম হলো কাতার রিয়াল (Qatari Riyal), যার প্রতীক বা সংক্ষেপে QAR। এটি কাতার সরকার কর্তৃক পরিচালিত এবং কাতার সেন্ট্রাল ব্যাংক এই মুদ্রার নিরীক্ষা করে। কাতারি রিয়ালের উপ-মুদ্রা একক হলো দিরহাম, যেখানে ১ রিয়াল সমান ১০০ দিরহাম।
বাংলাদেশে যেমন ১ টাকা সমান ১০০ পয়সা তেমনি কাতারে ১ রিয়াল সমান ১০০ দিরহাম হিসাব করা হয়ে থাকে। কাতারি রিয়াল আন্তর্জাতিক বাজারে একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে পরিচিত, যার কারণে কাতারি রিয়াল বাংলাদেশের সকল প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এই রিয়াল বাংলাদেশে আসতে আসতে অনেক টাকায় পরিণত হয়। যার কারণে বাংলাদেশিদের কাছে এই মুদ্রার গুরুত্ব অনেক বেশি।
কাতার দিরহাম কি?
কাতার দিরহাম হলো কাতার রিয়ালের ক্ষুদ্রতম একক মুদ্রা, যেমন; বাংলাদেশের ১ টাকা সমান ১০০ পয়সা তেমনি কাতারে ১ রিয়াল ১০০ দিরহাম সমান । সহজে বললে, আমরা বাঙালিরা বাংলাদেশী টাকাকে যেভাবে পয়সা বলে থাকি তেমনি কাতারেও রিয়াল বা মুদ্রাকে দিরহাম বলে থাকে। অনেকে দিরহাম সম্পর্কে জানে না, আশা করি আপনি এখন থেকে এটি জানতে পেরেছেন।
কাতারের টাকার মান | (১ রিয়াল = কত টাকা)
আজকের এই রেট দৈনিক বাজারের পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, যে সকল বাংলাদেশী প্রবাসী কাতারে কাজ করেন এবং নিয়মিত টাকা পাঠান তাদের অবশ্যই দেশে টাকা পাঠানোর আগে অনলাইন থেকে কাতারি রিয়াল রেট দেখে নেওয়া উচিত।
কাতার ১ রিয়াল বাংলাদেশের কত টাকা? (Qatari Riyal To BDT)
তাই সকল কাতার প্রবাসীদের উচিৎ নিয়মিত অনলাইন থেকে কাতারের রেট সম্পর্কে জেনে নেওয়া এবং এমন কোন প্রতিষ্টান থেকে এক্সচেঞ্জ করা উচিত যারা রেট অন্যদের তুলনায় একটু বেশি দিয়ে থাকে, তাই আপনি চাইলে কয়েকটি প্রতিষ্টানের কাতার রিয়াল বিনিময় রেট জেনে নিতে পারেন।
কাতার রিয়াল রেট পরিবর্তনের কারণ সমূহ (কাতার টু বাংলাদেশ টাকার রেট)
কাতারের রিয়াল রেট সবসময় একই থাকবে না, বাংলাদেশের বিভিন্ন কারণে কাতারে রিয়াল রেট পরিবর্তন হতে পারে যেমন;
- হুন্ডি ও অবৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ
- বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
- ব্যাংকগুলোর চাহিদা ও সরবরাহ
- আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম
কাতাররে প্রচলিত কাগজের নোট (Qatar Riyal Notes) ও কয়েন
বাংলাদেশে যেমন কিছু নির্দিষ্ট কাগজের নোট রয়েছে যেমন; ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা ইত্যাদি তেমনি কাতারেও রয়েছে বিভিন্ন নির্দিষ্ট অংকের রিয়াল নোট যেমন;
- ১ রিয়াল → রঙ বেগুনি/হালকা নীলচে এবং সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ক চিত্র
- ৫ রিয়াল → রঙ সবুজ এবং কৃষি ও পরিবেশ
- ১০ রিয়াল → রঙ নীল এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি
- ৫০ রিয়াল → রঙ বেগুনি এবং কাতারের স্থাপত্য
- ১০০ রিয়াল → রঙ লালচে-গোলাপি এবং অর্থনীতি ও জ্বালানি
- ২০০ রিয়াল → রঙ বাদামি/হলুদ এবং কাতারের অর্থনৈতিক শক্তি
কাতারের প্রতিটি নোটের মধ্যে রয়েছে উন্নত নিরাপত্তা যেমন; (ওয়াটারমার্ক, হলোগ্রাফিক, স্ট্রিপ, সিকিউরিটি থ্রেড ইত্যাদি)। এছাড়াও, কাতারে নোটগুলো ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা হয় যেমনটা আমাদের বাংলাদেশের টাকার নোট গুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যায়। একদিনে বাংলাতে লেখা থাকে অন্যদিকে ইংরেজিতে লেখা থাকে এইরকম। কাতারের নতুন নোট গুলোর ডিজাইন অনেকটা আধুনিক ও কালারফুল।
জেনে রাখুন: কাতারের প্রচলিত কাগজের নোট বা ব্যাংকনোটগুলো কাতার সেন্ট্রাল ব্যাংক দ্বারা ইস্যু করা হয় এবং কাতারি রিয়াল (QAR বা QR) দেশটির অফিসিয়াল মুদ্রা। আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন কাতারে কি কয়েন নেই।
হ্যাঁ, কাতারেও মুদ্রা হিসেবে কয়েন আছে তবে এগুলো বর্তমানে খুব একটা প্রচলিত না। মানুষ বেশিরভাগই সময় কাগজের নোট ব্যবহার করে থাকে। কাতারে রিয়্যাল ভাগ হয় ১০০ দিরহামে, তাই কয়েন গুলো দিরহাম ভিত্তিক হয়ে থাকে যেমন;
- ১ দিরহাম
- ৫ দিরহাম
- ১০ দিরহাম
- ২৫ ও ৫০ দিরহাম কয়েন অতীতে ছিল, এখন কম দেখা যায় বা চালু নেই
কাতারের বাজারে দিন দিন কয়েন এর ব্যবহার অনেকটা কমে যাচ্ছে, কারণ কাতারে বেশিরভাগই মানুষ ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করে থাকে। বরতমানে, কয়েন গুলো বেশিরভাগই সময় পার্কিং মেশিন, ভেন্ডিং মেশিন, বা ছোট খুচরা লেনদেনে ব্যবহার করা হয় (যদি কেউ ক্যাশ ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে)।
কাতারি রিয়াল থেকে বাংলাদেশী টাকা এক্সচেঞ্জ রেট – (আজকের আপডেট)
কাতারি রিয়াল (QAR) | বাংলাদেশী টাকা (BDT) |
---|
অনেকে জানতে চান কাতারের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা, এছাড়াও জানতে চাই কাতার ১০০০ টাকা বাংলাদেশে কত টাকা, কাতারের ১০০ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা ইত্যাদি সত্যি কথা হলো কাতারে মুদ্রাকে টাকা বলা হয় না তাই বলতে হবে কাতারের ১ রিয়াল বাংলাদেশের কত টাকা।
কাতার মুদ্রা ইতিহাস | কাতার রিয়াল কিভাবে এসেছে?
১৯৬৬ সালে ব্রিটিশদের সাথে একটি নিরাপত্তা/সুরক্ষা চুক্তি করে। সেই সময় ব্রিটিশ ভারত শাসনের অধীনে কাতারে ভারতীয় রূপা প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে, ১৯৫৯ সালে গালফ রুপি (Gulf Rupee) চালু হয়, যা ছিল ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক কেবল উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য তৈরি একটি বিশেষ সংস্করণ।
১৯৬৬ সালে ভারত গালফ রুপির মান কমিয়ে দেয় (devalue)। তাই কাতার এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ প্রতিবাদ করে গালফ রুপি বাতিল করে। তাই সেই সময় খুব অল্প সময়ের জন্য কাতারে সৌদি রিয়াল ব্যবহার করে।
একই বছর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালের ২১ মার্চ কাতার এবং দুবাই একসাথে একটি মুদ্রা চালু করে যার নাম ছিল “Qatar and Dubai Riyal”, যা কাতার এবং দুবাই উভয় দেশে ব্যবহার করা হতো।
ঠিক কিছু সময় পর ১৯৭১ সালে কাতার স্বাধীনতা লাভ করে এবং দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে (UAE) যুক্ত হয়, ফলে কাতার নিজেদের নিজস্ব মুদ্রা চালু করে যার নাম “Qatari Riyal (QAR)”। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দেশে কাতার রিয়াল ব্যবহার হচ্ছে।
কাতার রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম
কাতার রিয়াল (QAR) ভাঙ্গানো বা এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া হলো:
- মানি এক্সচেঞ্জ হাউস: দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি রয়েছে, আপনি চাইলে তাদের মাধ্যমে খুব সহজে কাতার রিয়াল কে টাকায় কনভার্ট করতে পারবেন। এদের কাছ থেকে আপনি মোটামোটি ভালো রেট পাবেন, কিন্ত এটা কিছুটা রিস্ক।
- এয়ারপোর্ট এক্সচেঞ্জ বুথ: এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দরে মানি এক্সচেঞ্জ করা বর্তমানে অনেক বেশি সহজ। ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বড় বড় বিমানবন্দর গুলোতে কাতার রিয়াল এক্সচেঞ্জ রয়েছে, আপনি চাইলে সেখান থেকেও আপনার কাতার রিয়াল গুলো এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন। তবে সেটি শুধুমাত্র যখন সম্ভব যখন আপনি দেশে আসবেন, কারণ আপনি আর চাইলে সবসময় বাংলাদেশের বিমানবন্ধর গুলোতে আসতে পারবেন না।
- সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক: বাংলাদেশে প্রচুর বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত বেসরাকরি ও সরকারি ব্যাংক রয়েছে যারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা বাংলাদেশের মদ্রার সাথে এক্সচেঞ্জ করে দেয়, আপনি চাইলেও সেখান থেকে অনেক সহজে কাতারের রিয়াল এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন, এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি নিরাপদ।
- অনলাইন মানি এক্সচেঞ্জ: বর্তমান যুগটি হলো অনলাইন যুগ তাই আপনি চাইলে খুব সহজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট এর সাহায্যে কাতারের রিয়াল এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন। কিছু জনপ্রিয় ও শক্তিশালী মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট (বিকাশ, নগদ, বাইনেন্স, পেওনিয়ার) ইত্যাদি।
- পরিবার/বন্ধুদের মাধ্যমে: এটি পদ্ধতি হলো সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম, যদি আপনার বিশ্বস্ত কোন মানুষ থাকে তাহলে আপনি তার মাধ্যমে খুব সহজে কাতারের রিয়েল এক্সচেঞ্জ করতে পারেন।
সতর্কতা:
- কাতারের রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার আগে অবশ্যই যে দিন এক্সচেঞ্জ করবেন সেই দিনের তারিখ অনুয়ায়ী কাতারের রিয়াল রেট সম্পর্কে জেনে নিবেন।
- অবস্যই চেষ্টা করবেন জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত ব্যাংক বা প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে কাতার রিয়াল এক্সচেঞ্জ করা।
- অনলাইনের মাধ্যমে কাতারের রিয়াল এক্সচেঞ্জ করলে আগে আপনি হাতে টাকা পাবেন তারপর আপনি রিয়াল দিবেন।
উপসংহার
আপনি যদি কাতার থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত টাকা পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত হবে অবশ্যই টাকা পাঠানোর আগে একবার হলেও অনলাইন থেকে ১ রিয়াল = কত টাকা সেটা জেনে নেওয়া। কারণ, কাতারের মুদ্রার হার সবসময় উঠানামা করে থাকে। কাতারের মুদ্রা মান তুলনামূলক বাংলাদেশ থেকেও অনেক বেশি তারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে পরিবার-পরিজনের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ে এবং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আপনার কাছে আমার অনুরোধ বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর আগে অবশ্যই একবার হলেও অনলাইনে গিয়ে ঐ দিনে কাতারের রেট জেনে নিবেন এবং অন্যরাও সেটি জানার জন্য এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দিন।
আরো পড়ুন: