আজকে দুবাই টাকার রেট | দুবাই ১ দিরহাম বাংলাদেশের কত টাকা

বর্তমানে প্রচুর অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী কাজের উদ্দেশ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বা দুইবাইতে বসবাস করেন। তাই দুবার প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো দুবাই টাকার রেট বা দুবাই ১ দিরহাম (AED) বাংলাদেশে কত টাকা (BDT) সেই সম্পর্কে জানা। বিশেষ করে যে বাংলাদেশী প্রবাসী ভাইরা দুবাই থাকেন এবং নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন তাদের জন্য (Dubai Dirham To Bangladeshi Taka) আজকের এই পোস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকে দুবাই টাকার রেট সম্পর্কে।

দুবাই মুদ্রার নাম কি?

দুবাই (সংযুক্ত আরব আমিরাত) মুদ্রার নাম হলো দিরহাম। দুবাই মুদ্রার পূর্ণ নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত দিরহাম (United Arab Emirates Dirham), সংক্ষেপে দুবাই মুদ্রাকে সংক্ষেপে AED বা د.إ (আরবিতে লেখা) বলে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সকল শহরে – যেমন দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, রাস আল খাইমা ইত্যাদিতে এই মুদ্রা ব্যবহার হয়ে থাকে।

যখন কেউ বলে “দুবাই টাকার রেট”, তখন তারা মূলত দিরহাম (AED) থেকে বাংলাদেশি টাকা (BDT)-এর রেট বোঝায়।

মধ্যপ্রাচ্য আরব আমিরাত দিরহাম স্থিতিশীল মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। এই মুদ্রার মান কিছুটা ডলার রেট সম্পর্কে নির্ধারিত থাকে, যার ফলে এর বিনিময় হার অনেক সময় স্থিতিশীল থাকে। তাই বাংলাদেশী দুবাই প্রবাসীদের কাছে দুবাই দিরহাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুবাই ফিলস কি?

দুবাই দিরহামের সবচেয়ে ছোট একক হলো ফিলস, যেখানে ১ দিরহাম সমান ১০০ ফিলস। আমাদের বাংলাদেশে ১ টাকা সমান ১০০ পয়সা তেমনি দুবাইতে ১ দিরহাম সমান ১০০ ফিলস হিসাব করা হয়।

দুবাই টাকার রেট (১ দিরহাম = কত টাকা)

দুবাই 1 দিরহাম বাংলাদেশি টাকা (Dubai Dirham To BDT)

কিন্তু, আপনি যদি ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউস এর মাধ্যমে দিরহাম টু টাকা এক্সচেঞ্জ করতে চান সেক্ষেত্রে তাদের সিস্টেম অনুযায়ী রেট কিছুটা কম পেতে পারেন, অনেক সময় বেশি ও পেতে পারেন। রেমিট্যান্স পাঠালে সেক্ষেত্রে আপনি ভালো রেট পাবেন। যাইহোক, সকল দুবাই প্রবাসীদের উচিৎ দুবাই থেকে দেশে টাকা পাঠানোর আগে অনলাইন থেকে দুইবায়ের রেট জেনে নেওয়া।

দুবাই দিরহাম রেট পরিবর্তনের কারণসমূহ (দুবাই দিরহাম টু টাকা)

দুবাই দিরহামের রেট সবসময় একই থাকবে এইরকম কোন কথা নেই, নিয়মিত এই রেট পরিবর্তন হতে পারে। দুবাই দিরহাম রেট পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো:

  • দুবাই দিরহাম এর সাথে ডলারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে বিশ্ব বাজারে ডলারের রেট উঠানামা করলে দুবাই দিরহামের ও রেট উঠানামা করে থাকে।
  • প্রবাসী রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেশি হলে, অর্থাৎ দুবাই থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেশি হলে সেক্ষেত্রে ও দুবাই দিরহাম কিছুটা কমতে পারে।
  • বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক পরিবর্তন যেমন; তেলের দাম, বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঘটনা সেক্ষেত্রেও দুবাই দিরহামের মানকে ও প্রভাবিত করতে পারে।
  • এক্সচেঞ্জ হাউস বা ব্যাংক গুলো মার্কেট ট্রেন্ড অনুযায়ী তাদের নিজেদের মতো রেট নির্ধারণ করে সেক্ষেত্রেও দুবাই দিরহাম এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে কিছুটা কম বেশি হতে পারে।

দুবাই প্রচলিত কাগজের নোট (Dubai Dirham Notes) ও কয়েন

দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রচলিত মুদ্রা হলো দিরহাম (AED), নিচে দুবাই প্রচলিত কাগজের নোট ও কয়েন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো;

কাগজের নোট (Bank Notes): বাংলাদেশে যেমন ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ টাকার নোট রয়েছে তেমনি দুবাইতে রয়েছে বিভিন্ন কাগজের নোট যেমন:

নোটসরংবৈশিষ্ট্য
৫ দিরহামবাদামী-ধূসরঐতিহ্যবাহী দুর্গের ছবি
১০ দিরহামসবুজঐতিহাসিক মসজিদের ছবি
২০ দিরহামনীলাভনীলাভ নৌকার ছবি
৫০ দিরহামবেগুনিমরু প্রাণী ও ঐতিহ্যবাহী ভবন
১০০ দিরহামলালচেদুবাই শহরের ছবি
২০০ দিরহামহলুদাভসরকারি ভবনের ছবি
৫০০ দিরহামনীলউঁচু ভবন ও জাদুঘরের ছবি
১০০০ দিরহামবাদামী/সবুজআল আইন প্রাসাদ ও অন্যান্য

ধাতব কয়েন (Coins): আমাদের বাংলাদেশে যেমন কয়েন রয়েছে (১, ২, ৫ টাকার কয়েন) তেমন দুইবাতে ও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার কয়েন। বলে রাখি আমাদের দেশে যেমন ১ টাকা ১০০ পয়সা বা কয়েন হিসেবে ধরা হয় দুবাই ১ দিরহাম কে ১০০ ফিলস হিসেবে ধরা হয়। যেমন;

  • ১ ফিলস (ব্যবহার হয় না) → অনেক ছোট (এখন একদম দেখা যায় না বলে চলে)
  • ২৫ ফিলস → রূপালী রং → উট বা ঐতিহ্যবাহী জাহাজের ছবি
  • ৫০ ফিলস → বড় আকারে ঐতিহ্যবাহী ভবন
  • ১ দিরহাম → সবচেয়ে বেশি প্রচলিত → বিভিন্ন নকশা থাকে

দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নোট গুলোর মধ্যে রয়েছে উন্নত নিরাপত্তা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দিরহাম (Dirham) নোট ও কয়েন গুলোতে সাধারণত দুটি ভাষা ব্যবহার করা হয় যেমন; আরবী ও ইংরেজি। সাধারণত নোটের সামনের দিকে আরবী লেখা থাকে এবং পিছনের দিকে ইংরেজি ভাষায় লেখা থাকে। ঠিক একই নিয়মে অর্থাৎ বাংলদেশে ও সামনে দিকে বাংলায় লিখে থাকে এবং পিছনের দিকে ও ইংরেজিতে লিখে থাকে।

দুবাই দিরহাম থেকে বাংলাদেশী টাকা এক্সচেঞ্জ রেট – (আজকের আপডেট)

অনেকে আবার জানতে চান, দুবাই ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা আজকের রেট, দুবাই ১০০ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা, দুবাই ১০০০ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা। সত্যি কথা হলো দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে মুদ্রার নাম হলো দিরহাম তাই দুবাই ১ টাকা, দুবাই ১০০ টাকা, দুবাই ১০০০ টাকা বলাটা অশিক্ষিত এর পরিচয়। বলতে হবে দুবাই ১ দিরহাম, ১০০ দিরহাম, ১০০০ দিরহাম সমান বাংলাদেশের কত টাকা। আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন। আমি ইতোমধ্যে উপড়ে ১ দিরহাম সমান কত টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ দিরহাম সমান কত টাকা হিসাব করে দিয়েছি।

দুবাই মুদ্রার ইতিহাস | দুবাই দিরহাম কিভাবে এসেছে?

বর্তমানে দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) অংশ, তাদের মুদ্রা দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে। আজকের দিরহাম (AED) ব্যবহার করার আগে দুবাই সহ আরব আমিরাত অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা ছিল। সময়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিবর্তনের কারণে এইসব মুদ্রা ও পরিবর্তিত হয়।

দুবাই, ১৯ ও ২০ শতকের শুরুতে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, যেখানে যেখানে ভারতীয় রুপি (Indian Rupee) এবং মারিয়া থেরেসা থ্যালার (Maria Theresa Thaler) নামে রূপার কয়েন ব্যবহার করা হতো।

১৯৫৯ সালে, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত সরকার “গাল্ফ রুপি” (Gulf Rupee) চালু করে, তবে এই মুদ্রা মূলত উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিছু বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে ভারত সরকার Gulf Rupee এর মান কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার কারণে আরব আমিরাতের তখনকার আমিরশাহিরা ক্ষুব্ধ হয় এবং গাল্ফ রুপি পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হওয়ার ২ বছর পর অর্থাৎ, ১৯৭৩ সালের ১৯ মে চালু করা হয় নতুন মুদ্রা যার নাম আজকের সংযুক্ত আরব আমিরাত দিরহাম (United Arab Emirates Dirham)।

দুবাই দিরহাম এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম

দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাত দিরহাম (AED) এক্সচেঞ্জ বা ভাঙ্গানোর উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলো:

  • সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে আপনি চাইলে অনেক সহজেই দুবাই দিরহাম টু টাকা তে এক্সচেঞ্জ করতে পারেন। তবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংকের নির্ধারিত রেট অনুযায়ী এক্সচেঞ্জ করে নিতে হবে। কারণ, ব্যাংক গুলোর মার্কেট ট্রেন্ড অনুযায়ী এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে থাকে। শুধুমাএ ব্যাংক না অন্যান্য এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলো ও মার্কেট ট্রেন্ড অনুযায়ী রেট দিয়ে থাকে।
  • অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউস: বাংলাদেশে অনেক অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে, আপনি চাইলে তাদের মাধ্যমে ও দিরহাম টু টাকা কনভার্ট করে নিতে পারেন। তবে, সেক্ষেত্রে হয়তো রেট কিছুটা কম পাবেন।
  • এয়ারপোর্ট এক্সচেঞ্জ বুথ: বিমানবন্দর বা এয়ারপোর্ট এক্সচেঞ্জ বুথ এর মাধ্যমে ও আপনি চাইলে দিরহাম টু টাকায় কনভার্ট করতে পারেন। তবে, এভাবে তো আপনি চাইলে সব সময় করতে পারবেন না। আপনি যখন দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসবেন তখন আপনার জন্য এই সেরা উপায় গুলোর মধ্যে একটি হবে।
  • অনলাইনে মানি এক্সচেঞ্জ: বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় টাকা লেনদেন এর মাধ্যমে হলো মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন মানি এক্সচেঞ্জ ওয়ালেট। বিশেষ করে কিছু জনপ্রিয় মানি এক্সচেঞ্জ ওয়ালেট রয়েছে সেগুলো সারা বিশ্বে সাপোর্ট করে যেমন; (পেওনিয়ার, বাইনান্স ইত্যাদি) এছাড়াও, অনেক দুবাই প্রবাসী বিদেশে গিয়ে বিকাশের ব্যবসা করে থাকে তাদের মাধ্যমে ও আপনি চাইলে টাকা দেশে পাঠাতে পারেন। তবে এতে কমিশন একটু বেশি হবে।
  • বন্ধু/আত্মীয় স্বজন: যদি আপনার বিশ্বস্ত মানুষ থাকে তাহলে আপনি তাদের মাধ্যমে ও অনেক সহজে দিরহাম টু টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারেন।

সতর্কতা:

  • এক্সচেঞ্জ করার সময় অবশ্যই বিশ্বস্ত ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করবেন।
  • দুবাই থেকে দিরহাম টু টাকা এক্সচেঞ্জ করার আগে অবশ্যই আগে টাকা হাতে পাবেন তারপর দিরহাম দিবেন। তাহলে আপনি নিরাপদে থাকবেন।
  • দুবাই দিরহাম এক্সচেঞ্জ করার আগে অবশ্যই একবার হলেও ঐ দিনের দিরহাম রেট জেনে নিবেন।

উপসংহার

সকল দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের উচিৎ অনলাইন থেকে নিয়মিত দুবাই রেট সম্পর্কে জেনে নেওয়া। কারণ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রেমিট্যান্স ও ডলার রেট কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত মুদ্রা প্রতিনিয়ত পরিবর্তীত হয়ে থাকে। প্রবাসীদের আয় ও পরিবারের জীবনযাত্রা এই রেটের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই সঠিক সময়ের মধ্যে সঠিক দুবাই দিরহাম রেট জানা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আপনার কাছে অনুরোধ আর্টিকেলটা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অন্যদের ও জানতে শেয়ার করুন এবং আপনি এই পোস্টটি বুকমার্ক করে রাখুন ।

আরো জানুন;

Leave a Comment