জাপানের মুদ্রা, ইয়েন (¥ বা JPY) এই মুদ্রাটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লেনদেন করা মুদ্রার গুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে, বিশেষ করে ডলার এবং ইউরো পরেই জাপানের মুদ্রা ইয়েন এর অবস্থান। এছাড়াও জাপান হলো বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ গুলোর মধ্যে একটি তাই আমাদের দেশ থেকেই অনেকে জাপানে পড়াশোনা করতে যায়, তাদের জন্য আজকের এই আর্টকেলটি অনেক উপকার হবে কারণ এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন আজকের জাপানের টাকার মান কত বা জাপানের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা সেই সম্পর্কে।
Table of Contents
জাপানের মুদ্রার নাম কি?
জাপানের মুদ্রার নাম ইয়েন (Yen)। এর জাপানি নাম হলো 円 (えん, উচ্চারণ: এন) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা কোড হলো JPY। ইয়েনের প্রতীক হলো ¥। ইয়েন নামটি এসেছে চীনা শব্দ “Yuan” (圆) থেকে, যার অর্থ “গোল”। মেইজি সরকারের “New Currency Act” এর মাধ্যমে ১৮৭১ সালে এই মুদ্রাটি চালু করা হয়। ইয়েন হলো বিশ্বের তৃর্তীয় সবচয়ে বেশি ব্যবহার করা মুদ্রা, ডলার ও ইউরো পর এর অবস্থান।
জাপানে সেন (Sen) কি?
জাপানে “সেন” (Sen / 銭) হলো ইয়েনের (¥) ছোট একক, অর্থাৎ ইয়েনের উপ-মুদ্রা। জাপানের ১ ইয়েন সমান ১০০ সেন, অর্থ্যাৎ সেন হলো ইয়েনের সৎভাবে বিভিক্ত একটি অংশ। জাপানে সেন একসময় ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে জাপানে সেন-ভিত্তিক কয়েন বা কাগজের কোনো মুদ্রা আর ব্যবহার করা হয় না। এক সময় ৫ সেন, ১০ সেন, ২০ সেন, ৫০ সেন এর কয়েন ব্যবহার হতো এর প্রায় বিলুপ্ত বা ব্যবহার হয় না।
জাপানের টাকার মান কত (আজকের জাপানি ইয়েন রেট)
খেয়াল রাখতে হবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্টানের সিস্টেম অনুযায়ী রেট কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছুটা ফি প্রযোজ্য হতে পারে। যাইহোক, সামান্য রেটের কারণে মোট হিসাবের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য হতে পারে সে কারণে নিয়মিত এক্সচেঞ্জ রেটের ওয়েবসাইটে অথবা AjkeTakarRate ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।
জাপানের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা (জাপানি ১ ইয়েন = কত টাকা)
জাপানি ইয়েন রেটের পরিবর্তনের কারণসমূহ (জাপানি ইয়েন টু টাকা)
জাপানি ইয়েন রেটের পরিবর্তনের কারণ অনেক গুলো হতে পারে, তার মধ্যে সাধারণত যে সকল কারণে ইয়েনের রেট কমে বা বৃদ্ধি পায় সেগুলো হলো:
- বাণিজ্য ভারসাম্য: জাপান যদি বেশি পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করতে পারে বা করে থাকে তখন জাপানি ইয়েনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং ইয়েনের রেট বাড়ে অন্যদিকে জাপান যদি পণ্য আমদানি বেশি করে তাহলে জাপানে ইয়েনের চাহিদা কমতে থাকবে ফলে ইয়েনের রেট হ্রাস পাবে।
- মুদ্রানীতি: জাপান ব্যাংক (Bank of Japan – BOJ) যদি অর্থনীতিকে চাঙা করতে সুদের হার কমিয়ে রাখে তাহলে ইয়েন দূর্বল হয়। অনেক সময় নেতিবাচক সুদের হার ইয়েনকে অনেক দূর্বল করে ফেলতে পারে।
- মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি: জাপানে যদি দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতি (inflation) খুবই কম বা ঋণাত্মক (deflation) থাকে, যা BoJ-কে মুদ্রানীতি সহজ করতে বাধ্য করে তাহলে ইয়েনের মান অনেক বেশি দূর্বল হতে পারে।
জাপানি প্রচলিত কাগজের নোট ও কয়েন
নিচে জাপানের প্রচলিত মূল্যমান কাগজের নোট ও কয়েন গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে:
জাপানের প্রচলিত কাগজের নোট (Banknotes): নিচে দেওয়া হলো জাপানি কাগজের নোটের তালিকা
- ¥1,000 → রং নীলচে এবং হিদেও নোগুচি (জীববিজ্ঞানী) ছবি
- ¥2,000 → রং সবুজ-বাদামী এবং Shureimon Gate, ওকিনাওয়া ছবি
- ¥5,000 → রং বেগুনি এবং ইচিও হিগুচি (নারী সাহিত্যিক) বা পুরনো নোটে উমেকো ইশিও ছবি
- ¥10,000 → রং বাদামী এবং ফুকুজাওয়া ইউকিচি (শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক) ছবি
জাপানের প্রচলিত ধাতব কয়েন (Coins): নিচে জাপানের প্রচলিত ধাতব কয়েন গুলো তালিকা দেওয়া হলো
- ¥1
- ¥5
- ¥10
- ¥50
- ¥100
- ¥500
জেনে রাখুন; বর্তমানে ¥2,000 নোটটি খুব কম ব্যবহার হয় এবং এই নোটটি অনেক এটিএম এখন আর গ্রহণ করে না।
JPY থেকে BDT – জাপানের টাকার মান কত (আজকের জাপানি ইয়েন রেট)
জাপানি ইয়েন (JPY) | বাংলাদেশী টাকা (BDT) |
---|
অনেকেই জানতে চাই যে, জাপানের ১০০ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা এবং জাপানের ১০০০০ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা। খেয়াল রাখবেন জাপানের মুদ্রার নাম ইয়েন তাই বলতে হবে জাপানি ১ ইয়েন সমান বাংলাদেশের কত টাকা?
জাপানি মুদ্রার ইতিহাস – জাপানি ইয়েন কিভাবে এসেছে?
৬ষ্ঠ – ৮ম শতক এর কথা, এই সময়টাতে অর্থ্যাৎ জাপানে মদ্রা আসার আগে চাল, কাপড় এবং লবন ইত্যাদির বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জাপান নিজের মুদ্রা তৈরি করা শুরু করে চীনের Tang রাজবংশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। প্রথম জাপানি মুদ্রা হলো ওয়াদোকাইচিন (和同開珎) যা ৭০৮ খ্রিস্টাব্দে এটি ছিল ব্রোঞ্জের তৈরি, এবং চীনা মুদ্রার অনুকরণে এই মুদ্রা তৈরি হয়। ৯ম – ১৬শ শতক দিকে সরকারি মুদ্রা ব্যাবস্থাপনা দূর্বল হয়ে পড়ে, ফলে জাপানে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনা মুদ্রা ও স্থানীয় স্বর্ণ-রৌপ্যের টুকরা ব্যবহার করা হতো। জাপানে Muromachi ও Sengoku যুগে ব্যক্তিগতভাবে খোদাই করা স্বর্ণ ও রৌপ্য “oban” ও “koban” নামের মুদ্রা ব্যবহৃত হতো। জাপান আবার ১৮৭১ সালে “ইয়েন (¥)” নামক আধুনিক মুদ্রা চালু করে, যা ১০০ সেন-এ বিভক্ত। তখন থেকে আজ পর্যন্ত জাপানে ইয়েন নাম মুদ্রা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
জাপানি ইয়েন এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম (ইয়েন টু টাকা)
জাপানি ইয়েন টু বাংলাদেশী টাকা এক্সচেঞ্জ করার সহজ ও নিরাপদ নিয়ম গুলো নিচে দেয়া হলো:
- সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক: আমি মনে করি জাপানি ইয়েন এক্সচেঞ্জ করা জন্য ব্যাংক অনেক বেশি নিরাপদ হবে এবং রেট কিছুটা টা হয়তো কম পেলেও এটি অনেক বেশি নিরাপদ। জাপানি ইয়েন টু বাংলাদেশি টাকা এক্সচেঞ্জ করার সময় অবশ্যই সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক এর মাধমে লেনদেন করার চেষ্টা করবেন।
- বিমানবন্দরে মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার / বুথ: জাপানের নরিকো (Narita), হানেদা (Haneda) ইত্যাদি বড় এয়ারপোর্টে মানি এক্সচেঞ্জ সুবিধা আছে। এছাড়াও বাংলাদেশেও কিছু বড় বিমান বন্দরে মানি এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আপনি চাইল বিভিন্ন দেশের মুদ্রাতে এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন যেমন (USD, EUR, BDT ইত্যাদি) দিয়ে ইয়েন নিতে পারবেন।
- ম্যানুয়াল এক্সচেঞ্জ বুথ: বড় শহর যেমন টোকিও, ওসাকা, কিয়োটোতে “Travelex”, “World Currency Shop” ইত্যাদি এক্সচেঞ্জ শপ আছে। আপনি চাইলে তাদের এই সকল বুথের মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশের কারেন্সি থেকে জাপানি ইয়েনে এক্সচেঞ্জ করতে পারেন।
- VISA/MasterCard/UnionPay এর মাধমেও বর্তমানে অনেক দেশের মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করা যায় তবে এর জন্য ব্যাংক থেকে সেই দেশের মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করার অনুমতি নিতে হবে, আশা করি এটা সম্পর্কেও আপনি অলরেডি জানেন। যেমন আমরা কিন্তু দেশেই বসে আমেরিকান ডলার ইউজ করতে পারি।
- অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং: অনেক সহজ একটি কাজ, অর্থ্যাৎ আপনি যদি চান তাহলে বিভিন্ন অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং যেমন (বাইনান্স, পেপাল, পেওনিয়ার, ওয়েবমানি ইত্যাদির) সাহায্যেও জাপানি ইয়েন এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন।
উপসংহার
জাপানের মুদ্রা বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ ও শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক স্টুডেন্ট পড়াশোনা করার জন্য জাপান গিয়ে থাকে অর্থ্যাৎ পড়াশোনার দিক দিয়েও জাপান অনেকটা উন্নত। যারা, জাপানে আছেন বা যাবেন ভবিষ্যতে তাদের উচতি জাপান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং নিয়মিত আজকে জাপানের টাকার মান কত সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া। সর্বশেষ আপনার কাছে একটি অনুরোধ যদি এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগে এবং আপনার উপকার হয় তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি শেয়ার করে অন্যদের জানতে সাহায্য করুন, ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন: