ওমান হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি, যায় মুদ্রার নাম হলো ওমানি রিয়াল। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রা গুলোর মধ্যে ও ওমানি মুদ্রা একটি। আজকে আমি আপনাকে এই আর্টিকেলের মধ্যে জানাবো, আজকের ওমানের টাকার মান বা ওমান ১ রিয়াল সমান কত টাকা সেই সম্পর্কে। এছাড়াও, আপনি জানতে পারবেন কেন এই দেশের মুদ্রার দাম বেশি এবং এর পেছনের ইতিহাস কি?
বর্তমানে প্রচুর বাংলাদেশী ওমানে কাজ করে, এই সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজারের উপর। এছাড়াও, এই দেশে আরো ১০-১২ লাখ শ্রমিক রয়েছে যারা ওমানে কাজ করে এবং নিজ দেশে রেমিট্যান্স বা টাকা পাঠিয়ে থাকেন। সেই কারণে, ওমানের কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জানা উচিত আজকে ওমানের টাকার রেট কত, ওমানের 1 টাকা বাংলাদেশের কত টাকা সেই সম্পর্কে।
Table of Contents
ওমানি মুদ্রার নাম কি?
ওমানি মুদ্রার নাম হলো ওমনি রিয়াল (Omani Rial)। ওমানি রিয়াল এর আন্তর্জাতিক কোড হলো OMR। ওমানের মুদ্রার ছোট একক কে বলা হয়ে থাকে বায়সা (Baisa), যেখানে ১ রিয়াল সমান = ১০০০ বায়সা। ওমান রিয়াল বা ওমানের মুদ্রা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। মার্কিন ডলারের সাথে ওমান মুদ্রা নির্দিষ্ট হারে যুক্ত থাকার কারণে, এই মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল থাকে।
ওমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank of Oman) এই মুদ্রা ইস্যু করে। তেলের মতো শক্তিশালী অর্থনীতি কারণে ওমানের রিয়াল আজকে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠেছে। যার কারণে বাংলাদেশীরা ওমানে গিয়ে কাজ করে ওমান রিয়াল ইনকাম করার জন্য এবং এই মুদ্রা বাংলাদেশী টাকায় রূপান্তর করলে প্রচুর পরিমাণে টাকা পাওয়া যায়। যেখানে আমরা ১ ডলার সমান ১০০ টাকার উপর পাই সেখানে ১ ওমান সমান ২৫০ টাকার উপরে পেয়ে থাকি। তাই, বাংলাদেশিদের কাছে ওমানের টাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।
বায়সা কি? (১ রিয়াল সমান কত বায়সা)
অনেকেই জানে না তাই জানতে চাই, বায়সা কি। সহজভাবে বললে, বাংলাদেশে যে মুদ্রাকে পয়সা বলা হয় সেটাকে ওমানে বায়সা বলা হয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ১ টাকা সমান ১০০ পয়সা হিসাব করা হয়, তেমনি ওমানে ও ১ ওমানি রিয়াল সমান ১০০ বায়সা হিসাব করা হয়। আশা করি, আপনি আজকে থেকে জানবেন বায়সা কাকে বলে।
আজকে ওমানের টাকার মান (ওমান রিয়াল টু টাকা)
ওমান ১ রিয়াল = কত টাকা? (Omani Rial To Bangladeshi Taka)
সে কারণে সকল ওমান প্রবাসীদের উচিত নিয়মিত অনলাইন থেকে ওমান রিয়াল রেট বা মান দেখে নেওয়া এবং যারা সাধারণত একটু বেশি রেট দিয়ে থাকে তাদের মাধ্যমে ওমান রিয়াল থেকে বাংলাদেশী টাকায় এক্সচেঞ্জ করে নেওয়া। যদি পারেন তাহলে বিশ্বস্ত এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ওমান টাকা এক্সচেঞ্জ করতে পারেন, আর না হলে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে ও নিরাপদে ওমান রিয়াল এক্সচেঞ্জ করা যাবে।
ওমানি রিয়ালের মান কেন বেশি?
- প্রাকৃতিক সম্পদ: ওমানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ যার কারণে ওমানের অর্থনৈতিক অত্যন্ত শক্তিশালী।
- ডলারের সাথে সংযুক্তি: ওমান রিয়াল মার্কিন ডলারের সাথে নির্দিষ্ট হারে সংযুক্ত থাকার কারণে, ওমানের মুদ্রার মান স্থিতিশীল থাকে।
- কম মুদ্রাস্ফীতি: ওমানে মূল্যস্ফীতি কম থাকে, ফলে রিয়ালের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেশি।
ওমানের মুদ্রার রেট পরিবর্তনের কারণসমূহ
ওমান রিয়ালের রেট বাংলাদেশের বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে:
- বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
- আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম
- হুন্ডি ও অবৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ
- ব্যাংকগুলোর চাহিদা ও সরবরাহ
ওমানে প্রচলিত কাগজের নোট (Omani Notes) ও কয়েন
বাংলাদেশের মতো ও ওমানে কিছু প্রচলিত কাগজের নোট রয়েছে, বাংলাদেশে যেমন ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ টাকার নোট রয়েছে তেমনি ওমানের বিভিন্ন কাগজের নোট রয়েছে, যেমন;
টাকার নোট | রং | বৈশিষ্ট্য |
১ রিয়াল | সবুজ | সুলতান কাবুসের ছবি, ওমান সেন্ট্রাল ব্যাংক ভবনের ছবি, উন্নত নিরাপত্তা ফিচার। |
৫ রিয়াল | বেগুনি | ঐতিহাসিক দুর্গ ও সুলতানের ছবি, হলোগ্রাফিক স্ট্রিপ, ওয়াটারমার্ক। |
১০ রিয়াল | লাল | আল হজর পর্বতমালা ও ঐতিহাসিক মসজিদের ছবি, উন্নত এন্টি-কপিং বৈশিষ্ট্য। |
২০ রিয়াল | নীল | ওমান থিয়েটার ও ঐতিহ্যবাহী যা শিল্পকলা, রং পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা কালি। |
৫০ রিয়াল | বাদামী/সোনালী | সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় ও সুলতানের প্রতিকৃতি, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রযুক্তি। |
ওমানে প্রচলিত কয়েন (বায়সা): ওমানে রিয়ালের ছোট একক হলো বায়সা, যেখানে ১ রিয়াল = ১০০০ বায়সা। নিচের কয়েনগুলো প্রচলিত:
- ৫ বায়সা
- ১০ বায়সা
- ২৫ বায়সা
- ৫০ বায়সা
- ১০০ বায়সা (কখনো কখনো পাওয়া যায়)
বাংলাদেশে যেমন ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা কয়েন পাওয়া যায় তেমনি ওমানে ও কিছু প্রচলিত কয়েন রয়েছে। উপরে উল্লেখিত ওমান কয়েন গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে।
OMR থেকে BDT – ওমানের টাকার মান কত (আজকের ওমানি রিয়াল রেট)
ওমানি রিয়াল (OMR) | বাংলাদেশী টাকা (BDT) |
---|
অনেকেই জানতে চাই, ওমানের ১ টাকা সমান বাংলাদেশের কত টাকা, ওমানের ১০০ টাকা সমান বাংলাদেশের কত টাকা, ওমানের ১০০০ রিয়াল সমান বাংলাদেশের কত টাকা। সত্যি কথা হলো ওমানের মুদ্রার নাম রিয়াল, তাই ওমানে ১ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা এইরকম হিসাব হয় না। আপনাকে বলতে হবে ওমানের ১ রিয়াল সমান কত টাকা, ওমানের ১০০ রিয়াল সমান কত টাকা, ওমানের ১০০০ রিয়াল সমান কত টাকা।
ওমান মুদ্রার ইতিহাস । ওমানি রিয়াল কিভাবে এসেছে?
আজকের শক্তিশালী ওমান মুদ্রার সম্পর্কে বেশ কিছু ইতিহাস রয়েছে, এই মুদ্রা হুট করে চলে আসে নি। এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। ওমান রিয়াল ব্যবস্থা হওয়ার আগেও বিনিময় প্রথা (Barter System) প্রচলিত ছিল। মেসোপটেমিয়ার সময়কাল থেকেই ওমানে তামার তৈরি প্রাচীন কয়েন ব্যবহার করা হতো।
১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ওমানে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান রুপি ও ইস্ট আফ্রিকান শিলিং ব্যবহার করা হতো। এই সময়টাতে ওমানে ভারতীয় রুপি বেশি প্রচলিত ছিল। ১৯৫৯ সালে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক “Gulf Rupee” নামে বিশেষ একটি রুপি চালু করে, যার মান ভারতীয় রুপির সমান ছিল। ওমান সহ কয়েকটি দেশ এই মুদ্রা ব্যবহার করত।
এর কিছু দিন বা কিছু বছর পর, ওমানের তৎকালীন সুলতান সুলতান কাবুস বিন সাইদ ১৯৭০ সালে ক্ষমতায় আসার পর আধুনিক ও স্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা করেন। ১৯৭০ সালে “Omani Rial Saidi” চালু হয়। ১৯৭৩ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “Omani Rial” (OMR)।
ওমানি রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম
নিচে ওমান (OMR) এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
- সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বা সরকারি অনুমোদিত ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে ওমানি রিয়াল এক্সচেঞ্জ করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। সেক্ষেত্রে, সব ব্যাংক হয়তো আসল ওমান রিয়াল রেট থেকে কিছুটা কম দিতে পারে অনেক সময় বেশি ও দিতে পারে সেটা নির্ভর করে ব্যাংকের উপর।
- মানি এক্সচেঞ্জ হাউস: ওমান রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার অন্যতম আরেকটি উপায় হলো মানি এক্সচেঞ্জ হাউস। আপনি চাইলে খুব সহজেই বিভিন্ন অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ওমান রিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে রিস্ক একটু বেশি থাকলে ও মোটামুটি ভালো রেট পাবেন।
- অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং/ওয়ালেট: বর্তমান যুগ অনলাইন যুগ, তাই আপনি চাইলে খুব সহজেই বিভিন্ন শক্তিশালী ও জনপ্রিয় মোবাইল ওয়ালেট গুলোর মধ্যে ওমান রিয়াল এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে, আপনি ওমান রিয়াল রেট অনেক বেশি পাবেন এবং রিস্ক ও বেশি। কারণ, এখানে পারসন টু পারসন লেনদেন হবে এতে ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন হাত নেই। তবে, বর্তমানে দিন দিন অনলাইন মোবাইল ওয়ালেট গুলো নিয়মিত আপডেট হচ্ছে এবং প্রচুর বাংলাদেশিও এগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত লেনদেন করে থাকে। কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়ালেট হলো: (পেওনিয়ার, বাইনান্স, বিকাশ (যদি ওমানে এজেন্ট থাকে))।
- বিমানবন্দর মানি এক্সচেঞ্জ: আপনি যদি দেশে আসেন তাহলে আপনি চাইলে অনেক সহজেই বিমানবন্দর থেকে আপনার ওমান রিয়াল গুলো এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারবেন। বর্তমানে প্রায় বড় বড় বিমানবন্দর গুলো বিভিন্ন দেশের মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করে থাকে। তবে, সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো একটি রেট কম পাবেন। কিন্তু এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
- পরিবার/বন্ধুদের মাধ্যমে: আপনার যদি পরিচিত ও বিশ্বস্ত কেউ থাকে তাহলে আপনি তার মাধ্যমে ও মানি এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন, যদি সে সেটা করে থাকে।
সতর্কতা
- ওমানি রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার আগে অবশ্যই অনলাইন থেকে আজকের ওমানি রিয়াল রেট সম্পর্কে জেনে নিবেন।
- অনলাইনে ওমান রিয়াল এক্সচেঞ্জ করলে আগে আপনি টাকা পাবেন, তারপর আপনার মুদ্রা দিবেন।
- সবসময় চেষ্টা করবেন, বিশ্বস্ত প্লাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওমানি রিয়াল এক্সচেঞ্জ করার।
উপসংহার
ওমান রিয়াল অত্যন্ত শক্তিশালী মুদ্রা গুলোর মধ্যে একটি, এর প্রধান কারণ দেশটির তেলনির্ভর অর্থনীতি ও মার্কিন ডলারের সাথে সংযুক্ত বিনিময় হার। তবে এটি শক্তিশালী মুদ্রা হলেও প্রতিনিয়ত এই মুদ্রার রেট উঠানামা করে। যার, কারণে যেসকল ওমান প্রবাসী বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে থাকেন তাদের নিয়মিত ওমান ১ রিয়াল = কত টাকা সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ, যেহেতু এই মুদ্রার রেট অনেক বেশি থাকে, সামান্য রেট ও সব মিলিয়ে অনেক টাকা পাওয়া যাবে । সেই কারণে, অনলাইন থেকে একবার হলেও লেনদেন করার আগে ওমান রিয়াল রেট দেখে নিবেন। আপনার কাছে অনুরোধ, যদি এই আর্টিকেলটা আপনার উপকার করে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অন্যকে জানাতে সাহায্য করুন।
আরো পড়ুন: